প্রচণ্ড গরম ও মাহে রমজানের কারণে চাহিদা বেড়েছে রসাল ফল তরমুজের। ফলে ভোলা থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে এ তরমুজ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যাচ্ছে, চাষি থেকে হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের জন্য সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও ক্রেতা।
বর্তমানে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় খুচরা বাজারে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে প্রতিটি ২৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। অথচ খেত থেকে ওই একই তরমুজ চাষিরা ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। একই সঙ্গে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে।
ক্রেতারা বলছেন, কৃষকের খেতের চেয়ে বাজারে কয়েক গুণ বেশি তরমুজের দাম। ফলে দাম বেশি হওয়ায় তরমুজ কিনতে অনীহা সাধারণ ক্রেতাদের।
মজিবনগর তরমুজ চাষি আবুল কালাম বলেন, বাজারে চাহিদার সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দামে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক, অন্যদিকে চড়া দামে তরমুজ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। চরফ্যাশন উপজেলার পাইকারি বাজারে ৪ থেকে ৬ কেজি ওজনের তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে প্রতিটি তরমুজের দাম পড়ে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। অথচ খুচরা পর্যায়ে সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকায়।
বাজারে তরমুজ কিনতে আসা কামরুল সিকদার বলেন, এ বছর সন্তানদের এখনো তরমুজ খাওয়াতে পারিনি। রমজান উপলক্ষ্যে তরমুজের দাম বেশি। বাড়তি দামে তরমুজ কেনার সামর্থ্য নেই।
চরফ্যাশন উপজেলার নজরুলনগর এলাকার তরমুজ চাষি ইকবার হোসেন জানান, তারা খেত থেকে পিস হিসেবে আড়তদার ও পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করেন। বর্তমানে মাঝারি থেকে বড় আকারের ১০০টি তরমুজ ১৩ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
তরমুজের পাইকারি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, কৃষকের খেত থেকে কিছুটা কম দামে তরমুজ কিনলেও পরিবহণ ভাড়াতে অনেক খরচ পড়ে যায়। তাছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। সব খরচসহ প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়েছে ৩৩০ টাকা। এজন্য আকার ভেদে তরমুজ বিক্রি করতে হয়।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, চরফ্যাশন উপজেলায় গেন্ডারি, জাম্বু ও বাংলালিংক জাতের তরমুজ চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০ থেকে ৫০০ টন ফলন হতে পারে। তরমুজ চাষে কৃষকদের হেক্টরপ্রতি খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার
থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, উপজেলার নজরুলনগর, নুরাবাদ ও মুজিবনগর ইউনিয়নে তরমুজ চাষ বেশি হয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের আবাদের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বেশি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে তরমুজের দাম তিন-চারগুণ হওয়া অযৌক্তিক।’